৭ ই মার্চের ভাষণ
(7 March Speech of Bangabandhu)
আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান
১৯৭১ সালের ৭ ই মার্চ সাধারণ জনতার উদ্দেশ্যে
এক ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন।তিনি এই ভাষণ
তৎকালিন রেসকোর্স ময়দানে প্রদান করেন।রেসকোর্স
ময়দান বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান নামে পরিচিত।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের এই ভাষণের তাৎপর্যযতা অনেক।
💻 Table of the content
১) ৭ই মার্চের ভাষণ প্রদানের কারণ।
২) ৭ই মার্চের ভাষণের গুরুত্ব বা তাৎপর্য
৩) ৭ই মার্চের ভাষণের বৈশিষ্ট্য
৪) ৭ই মার্চের ভাষণকে বাঙালির মুক্তির সনদ বলার কারণ।
১) ৭ই মার্চের ভাষণ প্রদানের কারণঃ
১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ ভোটে বিজয় লাভ করেছিলো কিন্তু তৎকালীন পাজিস্তান সরকার পূর্ব পাকিস্তানের দল আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা হস্তান্তরে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র ও টালবাহানা করেছিল। তাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান
ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ প্রাদান করেছিল।
জুলফিকর আলী ভূট্টো ও ইয়াহিয়া খান আওয়ামী লীগের বিজয়ের পর আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করার জন্য ষড়যন্ত্রে নেমে পড়ে। ১লা মার্চ জাতীয় পরিষদে অধিবেশন হওয়ার কথা ছিল।কিন্তু ইয়াহিয়া খান জুলফিকর আলী ভুট্টোর অজুহাত দেখিয়ে ১লা মার্চের অধিবেশন স্থগিত ঘোষনা করে।
এর প্রতিবাদ স্বরূপ আওয়ামী লীগ ২রা মার্চ ঢাকায় ও ৩রা মার্চ সারা দেশে হরতাল ডাকা হয় এবং জনগণ এতে সাড়া প্রদান করে।৩রা মার্চ থেকে ২৫ শে মার্চ সারা দেশে অসহযোগ আন্দোলন চিলতে থাকে।তার এ ভাষণ প্রদানের কারণে অসহোযোগ আন্দোলোন আরো তেজোদিপ্ত হয়ে পড়ে।
অবশ্য ইয়াহিয়া খান এই পরিস্থিতি দেখে আগেই অর্থাৎ ৬ মার্চ ঘোষণা দেন যে ২৫ শে মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন হবে। ইয়াহিয়া খান কোনো অধিবেশনের জন্য ২৫ শে মার্চ পর্যন্ত সময় নেয়নি বরং ২৫ শে মার্চ মধ্যরতে গণহত্যা চালানোর প্রস্তুতির জন্য এত সময় নিয়েছিল।
যাইহোক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর ৬ মার্চ ইয়াহিয়া খানের ঘোষণা শুনে তাদের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে
বুঝতে পেরেছিলেন।তাই তিনি তার ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ এর ভাষণ প্রদান করেছিলেন। এই ভাষণে তিনি পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাস,বাঙালিদের সাথে বৈষম্য ও আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা হস্তান্তরের টালবাহানা সম্পর্কে বলেছিলেন।এছাড়াও তাদের যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।
২)৭ই মার্চেচে ভাষণের গুরুত্ব ও তাৎপর্যঃ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান তার ঐতিহাসিক
৭ ই মার্চের ভাষণ অত্যন্ত কৌশল এবং নিপুণতার
সাথে প্রদান করেন। তিনি তার ভাষণে
খুবই কৌশলের সাথে স্বাধীনতার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন এবং যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেছিলেন।
তার এ ডাকে পূর্ব-পাকিস্তানের প্রায় সকল বাঙালিরা
সাড়া দিয়েছিল এবং যুদ্ধের জন্য মানসিক ভাবে
প্রস্তুত ছিল এবং এ ভাষণে তিনি অসহযোগ আন্দোলনে বাঙালিদের সাড়া প্রদান করতে বলেছিলেন।
তার এ ভাষন প্রদানের ফলে বাঙালিরা স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুত ছিল এবং স্বাধীনতার ডাকের জন্য অপেক্ষায় ছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ভাষণের উক্তিগুলো ছিল রক্ত গরম করার মতো। তাই বাঙালিরা স্বাধীনতার জন্য এতো তেজোদিপ্ত ছিল।
মানসিকভাবে বাঙালিরা মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকার কারণে আমরা মাত্র নয় মাসে অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে যুদ্ধ করে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে সক্ষম
হয়েছিলাম।
তাই, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণ
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ।
৩) ৭ই মার্চেচে ভাষণের বৈশিষ্ট্যঃ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণের বৈশিষ্ট্য নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ
- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণ ছিল একটি অলিখিত ভাষণ।
- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান বিজয়ী দল হিসেবে দেশ পরিচালনার ঘোষণা দেন।
- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণে তিনি পাকিস্তানকে সর্বাত্মক অসহোযোগিতার নির্দেশ দেওয়া হয়। তিনি সকল ধরনের কোর্টট-কাচারি,অফিস-আদালত,দোকান-পাট বন্ধের নির্দেদে দেন।
- তিনি তার ভাষণে দেশকে শিত্রুমুক্ত করতে গেরিলা যুদ্ধের ইঙ্গিত দেন্ম
- ৭ই মার্চের ভাষণটি ছিল ১৮ মিনিট।
- তার এ ভাষণ ইউনেস্কো 'ওয়ার্ড ডকুমেন্টারি হেরিটেজ' হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
৪) ৭ই মার্চের ভাষণকে মুক্তির সনদ বলার কারণঃ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ ছিল বাঙালির মুক্তির সনদ।এ ভাষণ সারা দেশের মানুষকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করে যার কারণে বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধ হয় জীবনের মায়া ত্যাগ করে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে। তার ভাষণের উক্তিগুলো জাদুর স্পর্শে বাঙালি জাতিকে বীরের জাতিতে রূপান্তরিত করেছিল।
তার এ ভাষণ প্রদানের পরেই বাঙালিরা অসহোযোগ আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল এবং মুক্তির সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়েছিল। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের পর আমরা বিজয় অর্জন করি। এজন্যি ৭ই মার্চের ভাষণকে বাঙালির মুক্তির সনদ বলা হয়।
পরিশেষে বলা যায় যে,বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তাৎপর্যযপূর্ণ।এই ভাষণের জন্যই আমরা মুক্তিযুদ্ধে জয়লাভ করেছিলাম।
আমার ব্লগটি ভালো লাগলে অবশ্যই কমেন্ট করুন।
Tags:
অন্যান্য